Header Ads

Header ADS

সমালোচনা নয়,বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত



মোহনা ইসলাম ডিনাঃ 

প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের চারপাশ। উন্নয়নের ছোঁয়ায় আবর্তন হচ্ছে আমাদের শিক্ষিত সমাজের। কিন্তু আমার কাছে আজও শিক্ষিত সমাজের সংজ্ঞাটা খানিকটা হলেও অসম্পূর্ণ। আমরা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারিনি এখনো। আমাদের সমাজে আজও সবার কাছে মেয়েরা অনেকটা বিনোদনের একটা মাধ্যম। না, আমি কোনো শারীরিক হেনোস্তার কথা বলছি না। কিন্তু মানসিক ভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই মেয়েরা আজও সবার কাছে অপ্রিয় কোনো সমস্যার আয়োজন। অনেক উচ্চশিক্ষিত ভদ্রলোকদের মুখেও মাঝেমধ্যে শোনা যায় অহেতুক কিছু অভিযোগ। নিজের প্রিয় সহধর্মিণীও তখন যেন সবার কাছে হাসির ফোয়ারা। 

এই তো সেদিন।একজন উচ্চ শিক্ষিত ভদ্র লোক বললেন,মেয়েদের চোখের পানি অনেক সস্তা! পরিমানেও কম না। পরিমাণের দিক দিয়ে তা প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়ে অনেক বেশি। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,যে মেয়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় অসহ্য যন্ত্রনাকে সঙ্গী করে হাসি মুখে জন্ম দেন নতুন প্রানের স্পন্দন, সেই মেয়ের কান্নার কারণ টা অহেতুক না। বরং আপনার কাছ থেকে পাওয়া কোনো যন্তনা হয়তোবা সেই যন্তনার থেকেও তীব্র। তাই সে কাঁদতে বাধ্য। তাই আগে নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করুন। 

কারো মুখে আবার বলতে শুনেছি, মেয়ে মানুষ দুনিয়াতে এসেছে অশান্তি বাঁধানোর জন্য! যেখানে মা ফাতিমা একজন নারী হয়ে সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য শান্তি বয়ে এনেছিলেন সেখানে নারী কখনো অশান্তির কারণ হতে পারেন না। কারো কারো ভাষায়, মেয়েদের বুদ্ধি বলে কিছু আছে নাকি? মেয়ে মানুষ মানেই লোভী স্বার্থপর!! নারীকে যাঁরা আজও জ্ঞান শূন্য ভাবেন তাঁদের জন্য বলছি, পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় অর্জনের পিছনে নারী প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে আজীবনের অনুপ্রেরণা। বিদ্রোহী কবির কলমের ছোঁয়ায় "নারী" কবিতার মাধ্যমে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অনেক আগে।নারী কখনো লোভী কিংবা স্বার্থপর না। তাহলে পৃথিবীতে সবথেকে নিঃস্বার্থভাবে মা কখনো ভালোবাসার উদাহরণ হতেন না। কেউবা বলেন, মেয়েদের জন্য অফিস আদালতে কাজ করাটা শোভনীয় নয়! কিন্তু আমি বলবো, পুরুষ শাসিত এ সমাজে মেয়েদের অফিস আদালতে অশোভনীয় কাজের জন্য আপনি দায়ী নন তো? হয়তোবা আপনার একটুখানি সম্মান আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সমাজে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রকে করে তুলতে পারে আরো বেশি উপযোগী।

 "যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।"ভুলে যাবেন না,প্রবাদটা শুধু মাত্র নারীর জন্যই প্রযোজ্য।কারণ, একজন নারী পারেন দশভূজা হয়ে নিজের ক্লান্তিকে লুকিয়ে সমস্ত কাজ সামলে নিতে। যা পুরুষের দ্বারা এককভাবে প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া ধর্মীয় দিক দিয়ে নারীদের শালীনতার সাথে বাইরে কাজ করার পূর্ণ অধিকার আছে। কেউ কেউ কে তো আবার এটাও বলতে শুনেছি, মেয়ে মানে আল্লাহর গজব! তাঁদের উদ্দেশ্য বলতে চাই,এটি তো জাহেলিয়া যুগের বক্তব্য। প্রতিটি ধর্মেই মেয়েদের সবার উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে,"মহান আল্লাহ যখন কারো উপর বেশি খুশি হন তখন তাঁকে কন্যা সন্তান দান করেন।" হিন্দু ধর্মে নারীকে আরাধনার প্রতীকরূপে ব্যবহার করা হয়। তাই নারী মানেই বহুল প্রত্যাশিত কোনো পূর্ণ্যের অর্জন। 

অস্বীকার করবো না, কেউ কেউ আছেন এসব অভিযুক্ত বৈশিষ্ট্যের অনেকটাই বহন করে। একজন ধর্ষক যেমন কখনো পুরুষ হতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে এরাও কখনো প্রকৃত নারীর উদাহরণ হতে পারে না। ভুলে যাবেন না লুৎফুন্নেসা,ইলা মিত্র কিংবা বেগম রোকেয়ার মতন মেয়েরাও এই বাংলাতেই জন্মেছিলেন।তাই প্রকৃতভাবে নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে,নারী পুরুষ দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে তৈরি হোক এক সুস্থ সমাজের, এমন প্রত্যাশা আজকের পুরুষ শাসিত সমাজের কাছে। সত্যি বলতে, দিনের শেষে আমরা নারীরা আজো পুরুষের সাহায্য ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাই অনুগ্ৰহপূর্বক নারীকে নিয়ে সমালোচনা না করে বাড়িয়ে দিন একটুখানি সাহায্যের হাত। 

লিখেছেনঃ মোহনা ইসলাম ডিনা, 
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ (মাস্টার্স),
সরকারি পিসি কলেজ,বাগেরহাট।।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.