বুদ্ধিজীবি হত্যাঃ আমরা তোমাদের ভুলি নাই - মো.হেলাল
১৪ ই ডিসেম্বর ১৯৭১। ভয়াবহ এক কালো রাত। রাতের আধারে বাংলাদেশের মেধা শক্তিকে বিলিন করে দিতে চেয়েছিলো পাক-হানাদার বাহিনী।পরাজয় নিশ্চিত দেখে আমাদের ভূখন্ডের মূল চালিকা শক্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে রাতের আধারে অস্ত্র হাতে দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক,চিকিৎসক,আইনজীবী সহ অনন্য উচ্চপেশার মানুষদের নিধন শুরু করে তারা। তাদের লক্ষ্যে ছিলো আমাদের অজ্ঞ বা বিকলঙ্গ জাতি হিসেবে গড়ে দেওয়া। এমন একটি জাতি হবে যাতের কোন শিক্ষা থাকবে না,শিক্ষিত থাকবে না। কুসংস্কার এ ভরে যাবে। এ লক্ষ্যে তারা প্রায় ১ হাজার ততোধিক গুনি মনিষীকে হত্যা করেন। এ তালিকায় ছিলেন শিক্ষাবীদ নাট্যকার মূনির চৌধুরী,আনোয়ার পাশাএর মত ব্যক্তিবর্গ।
সাধারনত আমরা ১৪ ই ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করা হলেও বুদ্ধিজীবি হত্যার কাজ শুরু হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে৷ এ হত্যা যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত ছিলেন পাকিস্থানের সামরিক কর্মকর্তারা ও ফরমান আলী। সহযোগিতা করেন দেশীয় রাজাকার,আলবদর, আল শামস বাহিনী। স্বাধীনতা পরবর্তী বিশেষত '৭১ এর ২৯ ডিসেম্বর বেসরকারি ভাবে গঠিত বুদ্ধিজীবি হত্যা তদন্ত কমিটি গঠন হয় এর প্রতিবেদন এ জানা যায় প্রায় ২০,০০০ বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তার লক্ষ্যছিলো এদেশের শীর্ষবুদ্ধিজীবি দের গর্ভনর হাউজে আমন্ত্রন করে হত্যা করা। এ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন জহির রায়হান। তিনি প্রতিবেদন এ আরো বলেছিলেন, এরা নির্ভুলভাবে দেশের গনতন্ত্র মনোষ্ক লেখকদের ওপর আঘাত হেনেছেন। তারই ফল স্বরুপ ৭২ এর ৩০ জানুয়ারী জহির রায়হান নিখোজ হয়। বিজয়ের পর নিঁখোজদের স্বজনেরা বধ্যভূঁমি থেকে অনেকের মৃতদেহ শনাক্ত করে যা নরকীয় যন্ত্রনাকেও হার মানাবে। অনেকের দেহে বায়োনেটের খোচা,ছুরি দিয়ে চেরা ও বুন্দুকের গুলির সহ বহু নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ রাতে প্রায় শতবছর পিছনে ফেলে দিয়েছে তারা৷ ফলে দেশের মেরুদন্ড সোজা করে দাড়াতে লাগবে আরো কয়েক শত বছর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙ্গালি জাতি এই অপূরনীয় ক্ষতির টের পায়। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে দেখা দেয় অভিজ্ঞ ও গুনিদের অভাব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূনির চৌধুরীর মত শিক্ষকদের সংকট পড়ে যায়। এদিকে এই সুযোগে মাথাচড়া দিয়ে ওঠে তথাকথিত একদল বুদ্ধিজীবি। এদিকে দেশের এই করুন পরিস্থিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় হাত দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। রাষ্ট্রের শাসন কার্যের জন্য অল্পকিছুদিনের মধ্য দেশীয় ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালে খুন হন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার। আমরা সাধারন ভাবে ১৪ ডিসেম্বর কে বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করি।স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখন আমরা কি বুদ্ধিজীবিদের মহান আত্মত্যাকে শুধু দিবসের ভেতর ই সীমাবদ্ধ রেখেছি নাকি তাদের মহান আত্মবলিদানের থেকে শিক্ষা নিয়েছি?? তারা দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়ে আমাদের মাতৃভূমি উপহার দিয়েছেন আমাদের ও উচিৎ তাদের বলিদানের ফলে অর্জিত সর্বভৌমত্ব রক্ষায় সক্রিয় হওয়া৷ যাদের মস্তক ছিন্ন স্কন্ধের ওপর আমাদের এ দেশ দাড়িয়ে আছে, শ্রদ্ধাভরে স্বরন করি তাদের,আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে চাই আমরা তোমাদের ভুলি নাই, ভুলবো না। পরিশেষে বলতে চাই, সর্বদা অমলিন থাকবে,তোমাদের এ বলিদান, হে জাতির সূর্যসন্তান।
কোন মন্তব্য নেই