অবসরে ঘুরে আসুন জাফলংয়ে - আতাউর রহমান রাব্বি
আতাউর রহমান রাব্বি:
বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, পৃথিবীর রূপ তাই দেখিতে যাই না আর... রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কথামতে ছুটছি আমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপলীলাভূমি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে। আমার যাত্রাটি ছিল অনেক আনন্দময় কেননা যাচ্ছি আমি ট্রেনে। ট্রেনে ভ্রমণ খুবই আনন্দদায়ক কেননা ট্রেন ভ্রমণের প্রতিটি ক্ষণে জানান দিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের রূপসী বাংলাকে। সিলেট শহরে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে হৃদয়ে লাগিলো দোলা, কখন দেখবো প্রকৃতিকন্যা জাফলংকে আপনমনে। চলছি সিলেট শহর থেকে বাস দিয়ে ৬২ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে জাফলংয়ে আপন গতিতে। হয়তো কিছুটা দূরে শহর থেকে উত্তর দক্ষিণে, সিলেট জেলার গোয়াইঘাট উপজেলায় ডাউকি নদীর অববাহিকায় প্রকৃতি কন্যা রূপসী জাফলং। বাংলার প্রকৃতিতে ঋতুর পালাবদলে শীত শেষ এখন ঋতু রাজ বসন্ত। রাস্তা থেকে যতদূর দৃষ্টি যায় দেখা যায় হাড়গুলো প্রায় জলশূন্য। দেখা যায় সবুজের সমারোহ। চলতে চলতে প্রায় যখন জাফলংয়ের নিকটে তখন দেখা মিলে পাথরবর্তী শতশত ট্রাকের। চলছে তারা পাথর নিয়ে আপন গতিতে, অন্যদিকে শুনা যায় পাথর ভাঙ্গার মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দ। তার মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেলাম প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ে। বাংলাদেশের পিয়াইন নদীর অববাহিকায় ভারতের মেঘালয় প্রদেশের গা ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্থিত। সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি অঞ্চল। আসামের ওম নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ডাউকি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ওম নদী আবার উৎপন্ন হয়েছে আসামের জৈন্তা পাহাড় থেকে।
ছবিঃ প্রকৃতি কন্যা রূপসী জাফলং |
এই ডাউকি নদীই বাংলাদেশে পিয়াইন নদী নামে পরিচিত। এই পিয়াইন বা ডাউকি নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে জাফলং। সেখানে অনেক আনন্দের সাথে সময় কাটে ডাউকি নদীর স্বচ্ছ জলরাশিতে। ডাউকি নদীর পানি অনেকটা শীতল এবং অত্যন্ত চমৎকার। দেখেছি দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক জাফলং জিরো পয়েন্টয়ে। অনেকে করছে আনন্দের সাথে গোসল ডাউকি নদীর স্বচ্ছ জলে। সকলের সাথে আমিও নেমে পড়লাম ডাউকি নদীতে। লেগেছিল অনেক ভালো কেটে যায় ক্লান্তি। ডাউকি ব্রিজ দিয়ে চলছে হরেক রকম বিদেশি গাড়ি! এখানে বিদেশ আসলো কোথায় থেকে না বিদেশ নয় এটি ভারত। কেননা জাফলং হচ্ছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা। চলছে দু-দেশের নিরাপত্তা বাহিনীদের কড়া নিরাপত্তা। চারদিকে যেনো ছড়িয়ে আছে পাথরের সমাহার। রং বেরঙের পাথর সাদা,কালো, লাল, ফ্যাকাসে বা সবুজ অনেকটা মনোমুগ্ধকর। তার পাশ দিয়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর একটি কাজের দৃশ্য, তা হচ্ছে পাথরে লিখার কাজ। আপনি ইচ্ছা করলে লিখে নিতে পারেন প্রিয়জনের নাম পাথরের বুকে। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো বেলা, বেজে উঠল বিদায়ী ঘন্টা। সূর্য ডুবে যাচ্ছে পশ্চিমা আকাশে তাইতো ফিরতে হবে নিজ ঠিকানায় জাফলং কে ছেড়ে। হৃদয় যেনো ইঙ্গিত করছে মন থেকে গেলো জাফলংয়ে। তাইতো বলছি সকলকে অবসরে ঘুরে আসুন প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে।
ছবিঃ আতাউর রহমান রাব্বি |
কোন মন্তব্য নেই