করোনায় ভালো নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা
নূর আলম বাচ্চ, মোংলা প্রতিনিধিঃ
দেশে করোনা পরিস্থিতিতে ভালো নেই শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেসরকারি চাকরিজীবীরা ভালো না থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীরা ভালো আছেন। করোনার মহামারি সংক্রমণ এমন অবস্থায় ফেলেছে দেশের বিপুল সংখ্যকবেসরকারি চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষদেরকে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন আনারুল হক তার কাছে করোনা পরিস্তিতে কি ভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন করোনা শুরুতে সাধারন ছুটি তে কম্পানিতে বন্ধ ঘোষনা করেছে কর্তৃকপক্ষ প্রথম দু মাস জমানো অর্থ দিয়ে সংসার চালিয়েছি তার পর থেকে কখনো দিনমুজুরের কাজ করে, কখনো নিজের ব্যবহিত মোবাইল ফোন বিক্রি করে, কখনো না খেয়ে এভাবেই পারকরছি জীবন টা।
মোংলার দিগরাজ এলাকায় কয়েকটি টিউশনি পড়াতেন প্রিন্স নামের একজন গৃহশিক্ষক। আর তার এই উপার্জন দিয়েই চলতো ৪ জনের সংসার করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকেই সকল টিউশানি বন্ধ রয়েছে। তাই চোখে শুধু অন্ধকার দেখছি।
মোংলার একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকুরি করতেন মো: জামাল শেখ করোনা পরিস্তিতি তে কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন করোনা শুরু থেকে অর্ধেক বেতনে কিছু দিন কাজ করিছি তার পরে কম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হওয়া আমাদের অনেক কেই ছাটাই করে দিয়েছে বাড়িতে মা বোন নিয়ে এখন কি যে করবো তা ভেবে পাচ্ছি না এদিকে বাড়িভাড়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে বাড়িওয়ালা তার সাথে যোগ হয়েছে ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল।
মোংলার দূরপাল্লার যাত্রীবাহি বাস কাউন্টার ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বাপ্পি জানান করোনর শুরু থেকে কাউন্টার বন্ধ ছিলো অন্য কোনো আয় রোজগার ও নাই পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছি বিপকে জুনের ১ তারিক থেকে স্বাস্থবিদি মনে পরিবাহন চালু হলে ও যাত্রীর সংখ্য খুব ই কম অনেক দিন তো যাত্রী ই পাওয়া যায় না এমন ভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে পড়তে হবে খুব ই করুন অবস্থায়।
মোংলার কাকড়া ব্যবসায়ী আরিফ বিল্লাহ জানান প্রতিবেদক কে জানান এক করে কাঁকড়ার ক্রয় আদেশ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২৬ জুন থেকে হঠাৎ করে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে বিপাকে পড়ে মোংলা, বাগেরহাট সহ দেশের ক্ষুদ্র কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্তা চলমান থাকলে ব্যবসাবাণিজ্য গুটিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যেতে হবে।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, বাগেরহাটে তিন হাজার ৭৪৮ জন কাঁকড়া চাষি রয়েছেন। আর এক হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার ঘের রয়েছে। এগুলোতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়। দেশে উৎপাদিত শতকরা ৮৫ ভাগ কাঁকড়া চীনে রপ্তানি করা হয়। আর সামান্য পরিমাণ কাঁকড়া তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যায়। বাগেরহাট থেকে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ টন কাঁকড়া রপ্তানি হয়। চলমান পরিস্থিতিতে জেলায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫০ হাজার ব্যবসায়ী, জেলে এবং শ্রমিক কাঁকড়া শিল্প বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
করোনার প্রভাবে ধস নেমেছে দেশের অর্থনীতির জন্য
এদিকে করোনায় দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না বেসরকারি চাকরিজীবীরা, হচ্ছেন চাকরিচ্যুতও। অন্যদিকে কষ্টে আছেন বেসরকারি শিক্ষকরা।
বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই চলছে। প্রবাসী আয়ও কমতে শুরু করেছে, যার উপর নির্ভরশীল নিম্নমধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ। করোনা সংকটের কারণে চাকরি হারিয়ে প্রবাস থেকে লাখ লাখ কর্মীর ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে করোনার কারণে ১ম-৯ম গ্রেডের কোনো কর্মকর্তা মারা গেলে পেনশন সুবিধার বাইরেই তাঁর পরিবার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাবে। এর মধ্যে করোনার কারণে বিশেষ প্রণোদনা ৫০ লাখ, চাকরিকালীন অবস্থায় মৃত্যুর জন্য আট লাখ, ১৮ মাস পর্যন্ত ল্যাম্প গ্রান্ট, কল্যাণ তহবিল থেকে গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের টাকা, লাশ দাফনের জন্য পৃথক অনুদান, কল্যাণ তহবিল থেকে পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা ইত্যাদি নানা সুবিধা রয়েছে।
প্রণোদনার বাইরে বেশির ভাগ সরকারি চাকুরেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে কাজ করতে হচ্ছে না। গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খুললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অফিসগুলোতে অত্যন্ত কমসংখ্যক চাকুরেকে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এমনকি গাড়ি ব্যবহার না করেও উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা মাসে মাসে এ বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে খরচ পাচ্ছেন।
তবে দেশে সরকারি চিকিৎসকরা নানা ধরনের সুবিধা পেলেও সম্মুখভাগে কাজ করেও বঞ্চিত হচ্ছেন বেসরকারি চিকিৎসকরা। তাদের অনেকেই করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকলেও কোনো প্রণোদনা নেই। এমনকি অনেক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ছাঁটাই, বেতন কমানোসহ নানা ঘটনা ঘটছে।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী ধরা পড়ে। পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত ৩০ মে শেষ হয় টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি।
কোন মন্তব্য নেই